নীল পত্র

তুমি তো থাকতে পারবা না। কিন্তু আমি আমার জন্য এমন একটা জায়গা চাই। প্ল্যান গুলো যদিও তোমাকে নিয়ে করা। তোমাকে ছাড়া এই জায়গার হয়তো কোনো মূল্যও নাই। তুমি যদি আমার সাথে না থাকতে চাও তাহলে কি আর করবো? আমি একাই থাকবো। স্মৃতি গুলো নিয়ে থাকবো। তোমাকে মিস করবো আর রবীন্দ্রসংগীত শুনবো প্রাণ ভরে। স্বপ্নের মত করে থাকবো। একা একা আকাশ দেখবো। কখনো ভাববো যে আমার জন্য আমার মা কষ্ট পেয়েছিলো। মনে করবো আমি আর আমার মা কত মজা করেছি এক সময়। সুখ গুলো যেমন ভাগ করে নিতাম দুঃখ গুলোও তেমনই ভাগ করা ছিল। কত মুহুর্ত ছিলো সুন্দর সুন্দর। সময় দেখতাম বার বার কখন ১১ টা বাজবে। একসময় মনে হতো ১১টা বাজা মানে মা আমার। আমি জানি আমি ভুল ছিলাম কিন্তু আমার সাথে মা তো ছিলো।
কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমাকে বলবো – জানো মা আমি আজ আম্মুকে মিস করছি। কতদিন দেখি না আম্মুকে। জরিয়েও ধরি না। এত কাল বলেছি আমি আম্মুর থেকে দূরে চলে যাব আম্মুকে বোঝানোর জন্য কিন্তু কষ্টটা তো আমার বেশি হচ্ছে। আজ সত্যিই মনে হচ্ছে যে আমি তোমাদের থেকে অনেক দূরে। যেই দুরত্ব আমার ভেতরটা পর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলেছে। তাও এটা ভেবে ভালো লাগছে যে তোমরা দুইজন আমাকে মিস করো।তোমাদের নিয়ে এখন আমি যেমনটা ফিল করি আই উইশ তখন তোমরাও আমাকে নিয়ে একই রকম ফিল করবা। অসম্ভব যন্ত্রণা হবে তখন জানো? মুখ বন্ধ করে সহ্য করতে হবে কিন্তু চোখ থেকে পানি পরা যাবে না। তোমাদের তো আমি আমিই সব না? কিন্তু জানো তো, দিন শেষে তোমরাই আমার সব। তোমাদের দুজনেরই আরও কেউ আছে। তারা আমার থেকে অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। আমার থেকে তাদের প্রতি তোমাদের দাবীও বেশি থাকবে আর তাদেরও তোমাদের প্রতি অনেক অধিকার। যা আমার কোনোদিনই ছিলো না আর হবেও না। কিন্তু তবুও তোমাদের ছাড়া তো কেউ নেই। একা কি করে থাকবো বলো তো? আমার কি তোমাদের কথা মনে হবে না? আমার একার পৃথিবীটাও তো তোমাদের নিয়ে সাজানো। কিন্তু সেখানে তোমরাই নেই। তোমাদের দিনে একবারও সময় হবে না আমার সাথে একটু কথা বলার। তবে আম্মুও ভুলতে পারবে না আমাকে আর তুমিও না। আম্মু হয়তো রাগ হয়ে কথা না বলে থাকবে দিনের পর দিন কিন্তু তুমি থাকবা বছরের পর বছর। আম্মু হয়তো আমার রুমে কখনো ঢুকবে না কিন্তু তুমি তো আঁচল ছেড়ে শাড়ি কখনো পরবে না। আম্মু কি ধুলো ঝাড়তেও ঢুকবে না আমার রুমে? তুমি কি তোমার বরের কথায়ও আঁচল ছেড়ে শাড়ি পরবে না? ঘুম থেকে উঠলেই কি কান্না পাবে আমার? ঘুমোতে যাওয়ার আগের নেশাটা কি তখনও রয়ে যাবে?একা হাতে পেট ভরে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আমার পেট কি ভরবে? তোমার পুচকুকে খাওয়ানোর সময় আমার কথা কি একবারও মনে হবে না? খেতে চাইবে না তাও জোর করে খাওয়াতে হবে তোমার। কিন্তু একসময় যে মায়ের হাতে খাওয়ার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করতো সে তো আর চাইবে না। একদিন আমি একটা নতুন ডায়রি কিনবো। সেখানে এমন কিছু কথা লেখা থাকবে – ” মা তোমার কি আমার কথা মনে পরে? কত রাতে কত কিছু করেছি সবটা কি মনে আছে তোমার? কেউ তোমাকে জরিয়ে ধরলে আমার হিংসে হতো। কান্না চলে আসতো সাথে সাথে কিন্তু তখন সামনে যেতাম না তোমার। এখন তো কেউ তোমাকে অনেক বেশি জরিয়ে ধরে। তুমিও ছাড়ো না তাকে। এত আদর! এখন আমার হিংসে হয় না।এখন বার বার ভাবি – কি দোষ ছিলো আমার? আমি কেন তোমাকে পেলাম না? আজ তোমার থেকে অনেক দূরে থেকেও কেন তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে? কেন তোমার উপর কোনো দাবি করতে পারি না আমি? কেন আম্মুর উপর থেকে আমার সব দাবি মুছে গেছে?কেনো তোমার কোলে মাথা রাখার জন্যেও আমার কারো পার্মিশন নিতে হয়? তুমি কি আমার কেউ না? তাহলে কেনো এসেছিলে আমার কাছে? আমিতো যাইনি। তাহলে এখন তুমিই কেনো আমার থেকে দূরে চলে গেছো? তুমি অন্য কারো – এটা আমি কিভাবে মেনে নিব বলো তো?? একদিন কাজল পরেছিলে আমার জন্য। এখনো কি কাজল পরো? কাজল পরার সময় মনে হয় আমার কথা? নাকি অন্য কারো জন্য পরো? ওরা কি তোমার কাজল পরা দেখে আমার মত খুশি হয়? অনেকক্ষণ ধরে দেখতে থাকে তোমাকে? আমি যে কি বলছি এসব, বলো তো!! ওরা তো খুশি হবেই, ওরাই তো অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকবে আর তুমি তো ওদের জন্যই সাজবে। ওরাই তো তোমার সব।আর তুমি ওদের সব। আমি তো তোমার সেই খারাপ স্মৃতিটা। যা মনে পড়লে সমস্তটা ভেঙে যেতে থাকে তোমার। তোমার কষ্ট হয় অনেক। তাই হয়তো আর মনে করতে চাও না। এখানে সবটা ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। চিরদিনের জন্য ভুলে যাও আমাকে, মামাকে।

মা তোমার স্মেলটাকি এখন অন্য কেউ পায়? কেন পায়? মা এটা না আমার ছিলো? এভাবে দিয়ে দিলা? আমার জিনিসের কোনো ভ্যালু নেই তোমার কাছে? আমার জিনিসটা আমাকে না জিজ্ঞেস করেই অন্য কাউকে দিয়ে দিলা? কেনো দিয়ে দিলা? তবে আমার কি কিছুই না? আমি কি তোমার থেকে এটাও দাবি করতে পারি না? এতটুকু অধিকারও কি আমার নেই? আম্মুর স্মেল পেয়েছি ২/৩ বার। তোমাকে পেয়েছি ১ বার। মা, আম্মু তো কখনো আমার ছিলো না কিন্তু তুমি তো একটা সময় আমার ছিলা। আমার মাকে কেন অন্যকাউকে দিয়ে দিলা? আমার কাছে আমার মা নেই কেন? আমার মাকে নিয়ে আর আম্মুকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো কেনো একা বাস্তবায়ন হচ্ছে? তাহলে কি আমার আসলেই কেউ নেই? এখানে একা এসে আমি ভুল করিনি তবে! ভেবেছিলাম আমার একা একা তোমাদের থেকে দূরে চলে আসাটা হয় তো আমার ভুল ছিলো।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ঠিক ছিলাম। মা জানো, এখনো আমি তোমার সাথে ঘুরতে যাই। এক সাথে বসে আলতা দেই।শাড়ি পড়ি। সারাদিন আমি তোমার পিছন পিছন থাকি। রাত হলে তোমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকি। তোমাকে জরিয়ে ধরলে ঘুমের মধ্যে হুশ থাকে না আমার। এখনও আম্মু আমাকে ভাত খাইয়ে দেয়। একটু খাওয়ার পরে এখনও বলি আম্মু আর খাব না। আম্মু বকা দিয়ে সবটা শেষ করিয়ে বলে – এই ভাত গুলো এখন কার পেটে গেলো? জানো তোমার সাথে আমার ভিডিও কলে এখনো কথা হয়। তুমি আমাকে গল্প শুনাতে ব্যস্ত থাকো আর আমি মনোযোগ দিয়ে গল্প শুনতে থাকি। কিন্তু মা জানো এখন কেউ বলে না – আচ্ছা গুড নাইট, ঘুমাও এবার। কেউ এটাও বলে না – আচ্ছা কাটি।আমি এখন যেমনটা চাই আমার মাকে তেমনি ভাবে রাখতে পারি। আম্মুও আমার মতই থাকে। রঙ চা খায় আমার সাথে। বকা দেয় না আমাকে। কিন্তু আম্মুর বকা গুলো তো আমি মিস করি। কেউ তো কথাও বলে এখন আমার সাথে। জ্বর আসলে কেউ বলে না ওষুধ খেয়ে আসো। মা এখন আমি ওষুধ খাই। একদম ভালো হয়ে গেছি। তোমাকে কত বিরক্ত করছি এই ওষুধ নিয়ে আর দেখো এখন আমি কত ভালো হয়ে গেছি। সময় মত ওষুধ খাই। মা তোমার কথা আম্মুর কথা আমার অনেক মনে পরে। আসার সময় আমি তোমার ওড়না আর আম্মুর একটা ওড়না সাথে করে নিয়ে এসেছি। জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকি। জানো মা তোমার দেয়া আলতার বোতলটা এখনো আছে আমার কাছে। যত্ন করে রেখে দিয়েছি।”

বাকিটা সেই ডায়রিতেই লিখবো।।

২৭ ডিসেম্বর, ২০২০

Published by zesika Islam 21

আমি বিশ্বাস করি, আমি একজন ভালো মানুষ। আর এর পিছনে তিনজনের অবদান। প্রথমত আমার আম্মু দ্বিতীয়ত আমার বাবা আর সবার শেষে আমার মা।

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started